
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দুটি শক্তি লুকায়িত থাকে। একটি ফেরেশতার চরিত্র বা ইতিবাচক গুণাবলি আর দ্বিতীয়টি হলো শয়তানি চরিত্র বা মন্দ স্বভাব। নেতিবাচক স্বভাবের একটি হলো অহংকার। অহংকার শয়তানের চরিত্র। এই অহংকার ও হিংসাই ইবলিশকে ফেরেশতাদের শিক্ষক থেকে শয়তানে পরিণত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘সে (ইবলিশ সম্মানিত আদমকে সিজদার মাধ্যমে সম্মান করতে) অস্বীকার করল এবং অহংকার করল, পরিণতিতে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
তিনটি বস্তু মানবের ধ্বংসের কারণ—প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা, লোভ ও আত্ম-অহংকার। তিনি আরও বলেন, ‘অহংকারই হলো সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক।’
আত্মগৌরব করা শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে টানাটানি করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন; তার প্রভাব, প্রতাপ, প্রতিপত্তি নস্যাৎ করে দেন এবং তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন। হাদিস কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি।’ (আবু দাউদ: ৪০৯০)
‘অহংকার’ মানব স্বভাবের একটি নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য অংশ। অহংকার কী? হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অহংকার হচ্ছে সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে অপমান-অসম্মান ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম: ৯১)
কেন মানুষ অহংকার করে? আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘মানুষ অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করে, যখন সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ৬-৭)
শক্তি ও অর্থের গৌরব অহংকারের আরেকটি দিক। যার বর্ণনা কোরআন মাজিদে এসেছে,
‘অতঃপর সে (অহংকারী ব্যক্তি) কথা প্রসঙ্গে তার সঙ্গীকে বলল—আমার ধনসম্পদ তোমার চাইতে বেশি এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।’ (সুরা-১৮ কাহাফ, আয়াত: ৩৪)
অহংকারী সম্পর্কে কোরআন কারিমে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন,
‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণ করো না, নিশ্চয় তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি পর্বত সমান হতে পারবে না।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৭)
‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো, নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৮-১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
তিনটি বস্তু মানবের ধ্বংসের কারণ—প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা, লোভ ও আত্ম-অহংকার। তিনি আরও বলেন, ‘অহংকারই হলো সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক।’ (বায়হাকি, মিশকাত: ৫১২২)
সব পাপের মূল উৎস তিনটি, এক. অহংকার যা ইবলিশের পতন ঘটিয়েছিল। দুই. লোভ, যা জান্নাত থেকে আদম (আ.)–কে বের করেছিল। তিন. হিংসা, যা আদম (আ.)–এর এক সন্তানের বিরুদ্ধে অপর সন্তানকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছিল। যে ব্যক্তি উক্ত তিনটি বিষয়ের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে, সে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। কুফরির মূল উৎস হলো ‘অহংকার’, পাপকর্মের মূল উৎস হলো ‘লোভ’, বিদ্রোহ ও সীমা লঙ্ঘনের মূল উৎস হলো ‘হিংসা’। (ইবনুল কায়্যম, আলফাওয়ায়িদ: ৫৮ পৃষ্ঠা)
অহংকারীদের পরিণতি সম্পর্কে রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন,
‘অহংকারী ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিন উঠবে মানুষের রূপে পিঁপড়াসদৃশ ক্ষুদ্রাকৃতিতে। সর্বত্র লাঞ্ছনা তাদের বেষ্টন করে রাখবে। অতঃপর তাদের বুলাস নামক জাহান্নামের এক কারাগারের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যেখানে লেলিহান অগ্নি তাদের ঢেকে ফেলবে। সেখানে তারা জাহান্নামিদের পোড়া দেহের গলিত পুঁজ-রক্তে পূর্ণ ‘তিনাতুল খাবাল’ নামক নদী থেকে গরল পান করবে।’ (তিরমিজি: ১৮৬২, ২৪৯২; মিশকাত: ৩৬৪৩, ৫১১২)
প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন,
‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম: ৯১) দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হলো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হ্রাস পাবে। যদি কারও অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে, তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়, বোধশক্তি লোপ পায়; সে অন্যের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তার চেহারায়, আচরণে, চলনবলনে ও কাজকর্মে অহংকারের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৪০২৯)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামিদের বিষয়ে খবর দেব না? তারা হলো বাতিল কথার ওপর ঝগড়াকারী, হঠকারী ও অহংকারী।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৫১০৬)
মনে রাখতে হবে
অহংকারী ব্যক্তিও বড় গোনাহগার। কারণ শয়তানের প্রথম অপরাধই ছিল অহংকার। সুতরাং যে ব্যক্তি অহংকার করলো সে নিজেকে শয়তানের করা প্রথম গোনাহটি করে নিজেকে শয়তানের সঙ্গেই অপরাধী করে নিলো। (নাউজুবিল্লাহ) সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম অহংকারের মতো জঘন্য গোনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। অহংকার মুক্ত থাকতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-
উচ্চারণ : রাব্বানা জালামনা আংফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাছিরিন। (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয় আমরা আমাদের নফসের উপর অত্যাচার করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’
অহংকারীর স্থান জাহান্নাম
অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কেয়ামতের দিন তুমি তাদের মুখগুলো কালো দেখতে পাবে. অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নামে নয়? (সুরা যুমার: ৬০)
তাদেরকে ‘বলা হবে- জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করো, তোমাদেরকে চিরকাল এখানে থাকতে হবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট!’ (সুরা যুমার: ৭২)
‘তিল পরিমাণ অহংকার যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর তিল পরিমাণ ঈমান যার অন্তরে আছে সে দোজখে যাবে না।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৯৮)
অহংকার আল্লাহর চাঁদর
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক এবং গর্ব-অহংকার হচ্ছে আমারই চাদর। তাই যে ব্যক্তি এ দুয়ের কোনোটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো। (রিয়াজুস সালেহিন: ৬২৩; মুসলিম: ২৬২০; আবু দাউদ: ৪০৯০, ইবনু মাজাহ: ৪১৭৪, আহমদ: ৭৩৩৫)
অহংকারীর অপমানজনক শাস্তি
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,
‘দাম্ভিক ব্যক্তিদের কেয়ামতের দিন ক্ষুদ্র পিপড়ার ন্যায় মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে। জাহান্নামের বুলাস’ নামক একটি কারাগারের দিকে তাদেরকে টেনে নেওয়া হবে, আগুন তাদেরকে গ্রাস করবে, জাহান্নামীদের গলিত রক্ত ও পুঁজ তাদেরকে পান করানো হবে।’ (তিরমিজি: ২৪৯২)
অহংকারী বিপদ ডেকে আনে
‘কোনো ব্যক্তি অহংকারবশত নিজকে বড় মনে করে লোকজনকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। পরিশেষে অহংকারী ও উদ্ধতদের মধ্যে তার নাম লিখা হয়, তারপর সে অহংকারী ও উদ্ধত লোকদের বিপদে পতিত হয়।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ৬২৫)
অহংকারীর অন্তর মোহরাবৃত
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলী থেকে বিমুখ করে রাখব’ (সুরা আরাফ: ১৪৬)।
ফলে হক-বাতিলের পার্থক্য সে করতে পারে না। ইরশাদ হচ্ছে, ‘এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী দাপুটে ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (সুরা গাফির: ৩৫)
অবিশ্বাসীরা অহংকারী
‘তোমাদের মাবুদ এক মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তর অস্বীকারকারী এবং তারা অহংকারী। স্পষ্ট কথা- তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে তা-ও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নাহল: ২২-২৩)
অহংকারীদের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবেন না
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা অহংকারী ও দাম্ভিকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন,
‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের গুনাহ থেকেও পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি ও দাম্ভিক ফকির।’ (মুসলিম: ১০৭)
অহংকারীদের ওপর আল্লাহর রাগ
অহংকার এত বড় অপরাধ যে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বিচারকার্য শুরু করার আগে রাগান্বিত অবস্থায় ঘোষণা করবেন ‘আইনাল মুতাকাববিরুন’ অর্থাৎ দুনিয়াতে যারা অহংকার করে চলতো তারা কোথায়? এরপর তিনি অহংকারীদের পাকড়াও করার নির্দেশ দেবেন। তখন ফেরেশতারা তাদের পাকড়াও করবেন।
আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন,
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নেবেন অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে ডান হাতে ধরে বললেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় জবরদস্ত লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হাতে সমস্ত জমিন গুটিয়ে নেবেন এবং বললেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় জবরদস্ত লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা? (সহিহ মুসলিম: ৭২২৮-৬৯৪৪)
দুনিয়ায় অহংকারের শাস্তি
কেউ পছন্দ করে না অহংকারীদের। হয়ত সে তাৎক্ষণিক টের পায় না। এক আরবি গল্পে এর উপমা খুব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কেউ যখন নিচে তাকায়, তখন সবকিছুই তার কাছে ছোট ছোট মনে হয়। নিজের দুই চোখ দিয়ে হাজারো মানুষকে সে ছোট করে দেখে। কিন্তু যারা নিচে আছে তারাও তাকে ছোটই দেখে। অর্থাৎ অহংকারী যখন সবাইকে তুচ্ছ মনে করে তখন সেই অহংকারীকেও অন্য সবাই তুচ্ছ মনে করে। একবার বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি গর্ব করলে আল্লাহ তাআলা তাকে কঠিন শাস্তি দেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটে।
‘একদা এক ব্যক্তি এক জোড়া জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে (রাস্তা দিয়ে) চলছিল। তা নিয়ে খুব গর্ব বোধ হচ্ছিল তার। তার জমকালো লম্বা চুলগুলো সে খুব যত্নসহকারে আঁচড়ে রেখেছিল। হঠাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেন এবং সে কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই নিচের দিকে নামতে থাকবে।’ (বুখারি: ৫৭৮৯)
সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন,
‘একজন মানুষ সর্বদা অহংকার করতে থাকে, অতঃপর একটি সময় আসে, তার নাম জাব্বারিনদের (অহংকারী জালেম) খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তখন তাকে এমন আজাব গ্রাস করে, যা অহংকারীদের গ্রাস করেছিল’। (তিরমিজি: ২০০০, হাদিসটি হাসান)
এই হাদিসের বাস্তব নমুনা হলো- মানুষ প্রথমেই বড় ধরণের জালেম হয় না। বরং তা হলো চলমান প্রক্রিয়া। এক পর্যায়ে সে জাব্বারিনদের কাতারে অর্থাৎ অহংকারী ফেরাউন, হামান ও কারূনের কাতারে শামিল হয়। অহংকারীর পরিণাম বর্ণনায় সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) বলেন,
‘একদিন এক লোক রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দরবারে বাম হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে আল্লাহর রাসুল (স.) তাকে বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। উত্তরে লোকটি বলল, আমি পারছি না। তার কথার প্রেক্ষাপটে রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি পারবে না? মূলত রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কথা অমান্য করতে তাকে অহংকারই বিরত রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি আর কখনোই তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত ওঠাতে পারেনি। (সহিহ মুসলিম: ২০২১)
অহংকার করার কারণ
১) জ্ঞানের স্বল্পতা ২) পারিবারিক শিক্ষার অভাব ৩) পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার ৪) হিংসুটে মানসিকতা ৫) ধন- সম্পদ আধিক্য ৬) লোক দেখানো আমল ও ইবাদত ইত্যাদি
নিজের মধ্যে অহংকার আছে কি না যাচাই করুন
১. নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে তুচ্ছ ভাবার বদভ্যাস থাকলে বুঝে নেবেন আপনি নিশ্চিত অহংকারী। ঠিক এই দোষেই অভিশপ্ত হয়েছিল ইবলিস।
২. সত্যকে অস্বীকার করা। নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা, আরও অসংখ্য দাম্ভিক সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৩. হাঁটাচলায় বড়ত্ব প্রকাশ করা।
৪. অর্থ-সম্পদ ও সৌন্দর্যের কারণে অন্যের প্রতি অন্তরে তুচ্ছভাব উদ্রেক হওয়া।
৫. দরিদ্র মানুষ ও অধীনস্থদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা।
৬. ভুল স্বীকার না করা এবং নিজের ভুল অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া।
৭. নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা অহংকারের বড় আলামত।
অহংকার দূর করার উপায়
- ১) নিজের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব নিয়ে ভাবা
- ২) মৃত্যুর কথা সর্বদা স্মরণ করা
- ৩) পরকালে জবাবদিহিতার ভয়ে ভীত থাকা
- ৪) আমার প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহ্ দেখেন এই ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা
- ৫) গরিব ও এতিমের সহযোগিতা করা
- ৬) অসুস্থকে সেবা প্রদান অথবা সেবা প্রদানে সহযোগিতা করা
- ৭) দম্ভভরে পৃথিবীতে পদচারণা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা
- ৮) গোপন ও রিয়ামুক্ত আমলে নিজেকে অভ্যস্ত করা
- ৯) আল্লাহর ভয়ে গোপনে ক্রন্দন করা
- ১০) অন্যের সাথে নম্র আচরণ করা
- ১১) অন্যের ভুল ক্ষমা করে দেওয়া
- ১২) অহংকার বশত অন্যের সাথে অসদাচরণ করে ফেললে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া
- ১৩) ভুলক্রমে অহংকার প্রকাশ পেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
- ১৪) অহংকার থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া
- ১৫) অগ্রগামী হয়ে অন্যের আগেই সালাম দেওয়া
- ১৬) অহংকারীর পোশাক ও চাল চলন পরিহার করা
- ১৭) আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা করা।
অহংকারীর কিছু ধরন
নিজেকে নিরহংকার ভেবে অনেকে মনের অজান্তেও অহংকারী হয়ে ওঠে। আবার অনেক সময় কিছু কথা ও ভাব এভাবে ফুটে ওঠে-
১. সে কিছুই জানে না এমনভাবে চলাফেরা করলেও মনে মনে ভাবে- সে বেশি বা অনেক জানে।
২. যে কোনো বিষয়ে নিজেকে অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ জানা।
৩. অন্যকে তুচ্ছ বা চুনোপুঁটি ভাবা।
৪. কাউকে ছোট লোক বা ছোট লোকের বাচ্চা মনে করা।
৫. এখানকার সবার কাছে পরিচিত বলে ভাব নেওয়া।
৬. আমিত্ব ভাব প্রকাশ করা যেমন- আমি না হলে…; আমি না থাকলে…।
৭. এমন বলে ভাব নেওয়া- যা করেছি তা শুধু তোদের জন্য….।
৮. অন্যকে বোকা বা মূর্খ আখ্যায়িত করে বলা- আরে, তার কথা বলেন না! আমি না থাকলে ওর কোনো কিছুই হতো না বা ভাতও জুটতো না… ইত্যাদি।
দুনিয়ায় প্রথম অহংকারী কে?
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম অহংকারী ও দাম্ভিকতা প্রদর্শনকারী হলো- শয়তান। অহংকার করে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করতে আল্লাহর নির্দেশের অমান্য করে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি ঘোষণা করে। আল্লাহ তাআলা বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেন-
তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, (আদমকে) সিজদা করছ না; যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১২)
মানুষ কেন অহংকার করে?
১. যখন শয়তান তাকে কৌশলে গ্রাস করে ফেলে। তখন তার নিজের কথা, কাজ ও কৌশলকে নিখুঁত, নির্ভেজাল ও সর্বোত্তম ভাবতে শুরু করে। অন্যের বিশ্বাস, কথা ও কাজকে সন্দেহ করতে থাকে এবং অন্যের ভুলকে বড় করে ধরে নিজের গৌরবকে ফুটিয়ে তোলে।
২. নিজের বোকামি থাকলে অন্যকেও বোকা মনে করে; যা প্রকান্তরে অহংকার।
৩. নিজের বড় বড় ত্রুটি ঢাকতে অন্যের ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
৪. আল্লাহর ভয় কম থাকলে বা না থাকলে অহংকার ঢুকে যায়।
৫. নিজের আশ-পাশে চাটুকার ও অযোগ্য লোক থাকলেও লোকেরা অহংকারী হয়ে যায়।
৬. নিজে যা পাবার যোগ্য তার চেয়ে বেশি পেয়ে গেলেও মানুষে অহংকারী হয়ে যায়।
৭. নিজের প্রশংসা অন্যের মুখে বেশী করে শুনতে থাকলেও মানুষ অহংকারী হয়ে যায়।
৮. নিজের আত্মসমালোচনা যত কম হয়, অহংকার ততবেশি পেয়ে যায়।
৯. অন্যের মুখে নিজের সমালোচনা শোনার ধৈর্য্য কমে গেলেও আস্তে আস্তে মনে অহংকার ঢুকে পড়ে।
১০. কথা-কাজ-আচরণে বিনয় কমে গেলে অহংকার জায়গা করে নিতে থাকে।
অহংকারের ক্ষতি বা কুফল কী?
অহংকারের ক্ষতি বা কুফল অনেক বেশি। অহংকারী ব্যক্তি যেহেতু নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে; তাই সে সাধারণত সবার সঙ্গে ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা বলাকে নিজের মর্যাদাহানি মনে করে। যখন মানুষের সামনে যায় বা মেশে; তখন এমনটি কামনা করে যে, মানুষ তাকে সম্মান করুক; মর্যাদা দেওয়া হোক। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না মর্মে কোরআনে ঘোষণা এসেছে-
‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নেবে না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করবে না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক; অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৮)
কিন্তু অহংকারীর পরিণতি জাহান্নাম কেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যার অন্তরে অহংকার আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এর কারণ ওঠে এসেছে-
১. হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
বড়ত্ব আমার চাদর আর মহানত্ব আমার ইজার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (মুসলিম, মিশকাত)
২. অহংকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যার অন্তরে এক যাররা (অনু) পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোনোভাবেই অহংকার না করা। দাম্ভিকতা বা বড়ত্ব পরিহার করা। হাদিসের ওপর আমল করা। উল্লেখিত কারণগুলো পরিহার করা।
অহংকারের নানান রূপ রয়েছে
১. সত্যকে গ্রহণ না করা; অন্যায়ভাবে বিতর্ক করা।
২. নিজের সৌন্দর্য্য, দামী পোশাক ও দামী খাবার ইত্যাদি দ্বারা অভিভূত হয়ে পড়া এবং মানুষের ওপর দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ করা।
৩. আত্মীয়স্বজন ও বংশধরদের নিয়ে গৌরবের মাধ্যমেও অহংকার হতে পারে। অহংকার হকে পারে, নিজের সম্পদ, মেধা ইত্যাদিরও।
অহংকার প্রতিরোধ করার উপায়
নিজেকে অন্য দশজন মানুষের মতো স্বাভাবিক মানুষ মনে করা। অন্যসব লোককে নিজের সমতুল্য মনে করা।
অহংকারীর জানা উচিত যে, সে যতই বড় হোক না কেন- পাহাড় সমান তো আর হতে পারবে না; জমিন ছিদ্র করে তো বেরিয়ে যেতে পারবে না! যেমনটি আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন,
‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নীচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। ’-সূরা লোকমান : ১৭-১৮
অহংকার, প্রত্যাখান, দাম্ভিকতা এবং কোনো বিষয়ে কোনো মানুষের তার সীমা অতিক্রম করাই অহংকার, অহংকারের সঙ্গে অবাধ্যতার একটি বিশাল সংযোগ রয়েছে।
অহংকার প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় হলো
সব সময় এ কথা মনে রাখা যে, অহংকারী ব্যক্তি মানুষের নিকট অপছন্দীয় এমনকি আল্লাহতায়ালার নিকটও সে অপছন্দনীয়। সুতরাং আমি তো মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র! এই ঘৃণা নিয়ে আমি কীভাবে চলব?
মনে রাখবেন, সমাজের লোকেরা সব সময় বিনয়ী, নম্র-ভদ্র, সহজ-সরল মানুষকে ভালোবাসে। পক্ষান্তরে কঠিন ও রুঢ় স্বভাবের মানুষকে ঘৃণা করে।
কুরআন ও হাদিসে অহংকারকে একটি মারাত্মক গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অহংকার হলো নিজের গুণাবলী ও ক্ষমতার উপর অত্যধিক আত্মবিশ্বাস ও গর্ববোধ করা। অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যদেরকে অবজ্ঞা করে।
কুরআনে অহংকারের বিরুদ্ধে অনেক আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো:
“হে বনি আদম, আমি তোমাদেরকে সম্মানিত করেছি এবং তোমাদেরকে ভূপৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করেছি।” (সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ৭০)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সম্মানিত করেছেন বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অহংকারী ব্যক্তি এই সম্মানকে ভুলে যায় এবং নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তোমরা ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলাফেরা করো না, নিশ্চয় তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি পর্বত সমান হতে পারবে না।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৭)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অহংকারী ব্যক্তিদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তারা যতই দম্ভভরে চলাফেরা করুক না কেন, তারা কখনোই ভূপৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না বা পর্বতের সমান উঁচু হতে পারবে না। হাদিসেও অহংকারের বিরুদ্ধে অনেক নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো:
“অহংকার হলো আল্লাহর সম্মানের পোশাক। যে ব্যক্তি এ পোশাক পরিধান করার চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন।” (তিরমিজি)
অহংকার থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার ভয় ও পরকালের ভয় মনে রাখতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা আল্লাহর সৃষ্টি। আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।
অহংকার থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে পারি:
- আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমরা অহংকারের হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারব।
- নিজের ক্ষমতা ও গুণাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকা। আমরা যে যতই ক্ষমতা ও গুণাবলী অর্জন করি না কেন, সেগুলো আল্লাহর দান। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, সবকিছু আল্লাহর থেকে।
- অন্যদেরকে সম্মান করা। সব মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদেরকে অন্যদেরকে সম্মান করতে হবে।
- নিজের ভুল স্বীকার করা। আমরা যে যতই বড় হই না কেন, আমাদেরকে ভুল করতে পারে। ভুল করলে তা স্বীকার করতে হবে এবং তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
অহংকারের কতিপয় নিদর্শনঃ
- ১) অন্যকে নিজের তুলনায় ছোট মনে করা
- ২) অন্যের কাছে নিজের বড়ত্ব যাহির করা
- ৩) অধীনস্তদের সাথে দুর্ব্যবহার করা
- ৪) অন্যের আনুগত্য ও সেবা করাকে নিজের জন্য অপমানজনক মনে করা
- ৫) দাম্ভিকতার সাথে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা
- ৬) নিজের ভুলের উপরে জেদ করে অটল থাকা
- ৭) মানুষের সাথে নম্রতা পরিহার করে সর্বদা কঠোর আচরণ করা
- ৮) নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করা
- ৯) জ্ঞান অর্জন না করা
- ১০) অন্যের উপদেশ গ্রহণ না করা
- ১১) অন্যের নিন্দা ও কুৎসা রটনা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে না পারা
- ১২- শক্তি ও বুদ্ধির জোড়ে অন্যের হোক নষ্ট করা সহ ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অহংকার মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী দুনিয়া ও পরকালের সফল জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।