আমরা মুসলমান। দ্বীন আমাদের মৌলিক ভিত্তি। দ্বীনের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ঈমান ও আমলের সুউচ্চ সৌধ। আল্লাহ আমাদের রব। ইসলাম আমাদের ধর্ম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের রাসুল এবং আদর্শ। আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল ও আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। মানসিকভাবে প্রশান্ত। আলহামদুলিল্লাহ।
বর্তমান সমাজের চারদিকে গোনাহের ছড়াছড়ি। দ্বীনের উপর অটল থাকা মুমিনের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রকৃত মুমিন ঈমান নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। গোনাহের তুফানেও মুমিন ঈমানের ঝাণ্ডা নিয়ে অটল থাকতে চায়। তবে এর জন্য প্রয়োজন মজবুত হিম্মত ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।
ইসলামে দোদুল্যমানতার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনা অকাট্য। পাহাড়ের চেয়েও সুদৃঢ়। আমৃত্যু দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় অটল-অবিচল থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কখনো ডানে, কখনো বামে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে দ্বীনের ওপর অটল-অবিচল থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে। পুরোপুরি ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে দ্বীনের সুনির্মল পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া কোরআনের মৌলিক নির্দেশনাগুলোর অন্যতম।
‘হে মোমিনগণ, ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেন, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’- (সুরা বাকারা : ২০৮)।
দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় অবিচল থাকতে হবে ঠিক সেভাবে, যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে। নিজের পক্ষ থেকে সামান্য পরিবর্তন পরিবর্ধন করারও কোনো সুযোগ নেই। ইরশাদ হয়েছে,
‘হে নবী! তোমাকে যেভাবে হুকুম করা হয়েছে, সে অনুযায়ী তুমি নিজেও সরল পথে অবিচল থাক এবং যারা তওবা করে তোমার সঙ্গে আছে তারাও। আর সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছুই কর, তিনি তা ভালোভাবে দেখেন’। (সুরা হুদ : ১১২)।
আবু আমর সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) এক দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে আবেদন করে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাকে ইসলামবিষয়ক এমন একটি কথা (পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা) বলুন, আপনার অবর্তমানে যে বিষয়ে আমার আর কারো দ্বারস্থ হওয়া লাগবে না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুফিয়ান (রা.)-কে লক্ষ করে বলেন,
‘তুমি বল যে, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর (মৃত্যু পর্যন্ত) তুমি এর ওপর অটল-অবিচল থাক অর্থাৎ আমৃত্যু দ্বীনে ইসলামের ওপর সুদৃঢ় অটল-অবিচল থাক’- (সহিহ মুসলিম : ১/৬৫ মুসনাদে আহমদ ৩/৪১৩)।
দ্বীনের ওপর অটল-অবিচল থাকা একজন মোমিনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। শত ঝড় ঝাপটা আর প্রতিকূলতার মাঝেও একজন মোমিন দ্বীনের পথে অটল-অবিচল থাকে সুদৃঢ় পাহাড়ের মতো। দ্বীনহীন অনৈসলামিক পরিবেশে মোমিনব্যক্তি গা না ভাসিয়ে ঈমানের পথে দাঁড়িয়ে থাকে সটান মিনারের মতো। এভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন মোমিন যখন দ্বীনের পথে অবিচল থেকে আখিরাতের পথে রওনা হয় আসমানের ফেরেশতারা তখন দলবেঁধে ওই ব্যক্তিকে কোরাস গেয়ে জান্নাতের সুসংবাদ শুনায়। পবিত্র কোরআন মাজিদে বড় চমৎকার করে সে নয়নাভিরাম হৃদয় প্রশান্তিকর চিত্রটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে,
‘যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ। তারপর তারা তাতে অটল-অবিচল থাকে, নিশ্চয়ই তাদের কাছে (মৃত্যুর সময়) ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে বলবে, তোমরা কোনো ভয় করো না এবং কোনো কিছুর জন্য চিন্তিত হয়ো না আর আনন্দিত হয়ে যাও সেই জান্নাতের জন্য, যার ওয়াদা তোমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা পার্থিব জীবনেও তোমাদের সাথী ছিলাম এবং আখিরাতেও থাকব। জান্নাতে তোমাদের জন্য আছে এমন সবকিছুই, যা তোমাদের অন্তর চাবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে এমন সবকিছুই যার ফরমায়েশ তোমরা করবে। এসব সেই সত্তার পক্ষ থেকে প্রাথমিক আতিথেয়তা, যিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’- (সুরা হামিম সাজদা: ৩০-৩২)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, তারপর এতে অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয় দেখা দেবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা হবে জান্নাতবাসী। সেখানে তারা থাকবে সর্বদা। এটা তারা যে আমল করেছে তার প্রতিদান’- (সুরা আহকাফ : ১৩-১৪)।
যারা দ্বিনের ওপর অবিচল থাকবে, তাদের ব্যাপারে আছে সুসংবাদ। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন,
‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, তারপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে নাজিল হয় ফেরেশতা (এ বলে) যে তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার জন্য আনন্দিত হও।’ (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ৩০)
দ্বিনের ওপর অবিচল থাকার পদ্ধতি
এক. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর কাছে অধিক হারে দোয়া করা, যেন তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দ্বিনের ওপর অবিচল রাখেন।
রাসুল (সা.) আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন। কারণ মানুষের মন সর্বদা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকে। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এই দোয়া বেশি পাঠ করতেন, হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত (দৃঢ়) রাখো।(তিরমিজি, হাদিস : ২১৪০)
দুই. অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তিগফার পড়া।
ক্ষমা প্রার্থনার কারণে তার জন্য দ্বিনের ওপর অটল থাকা সহজ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো। তাহলে তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উত্কৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩)
তিন. ইলমে নাফে তথা উপকারী ইলম অর্জনের চেষ্টা করা।
উপকারী ইলম অর্জনকারীর জন্য তা আলো ও পথ প্রদর্শক। কোনো বান্দা ইলম ছাড়া সঠিক রাস্তায় চলতে পারবে না। ইলম তাকে সত্য-মিথ্যার পথ বলে দেবে। ভালো-মন্দের পথ দেখাবে। রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এই দোয়া করতেন,
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অনুপকারী বিদ্যা থেকে; এমন অন্তর থেকে, যে অন্তর (আল্লাহকে) ভয় করে না এবং এমন থেকে, যা কবুল হয় না আর ওই প্রবৃত্তি থেকে, যা তৃপ্ত হয় না। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমি এই চার বস্তু থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৪৭০)
চার. ভালো লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করা।
এই সাহচর্য আপনাকে ভালো-মন্দের পথ দেখাবে। যদি ভালো লোকের সাহচর্য গ্রহণ করেন, তাহলে দ্বিনের ওপর অবিচল থাকা সহজ হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন,
মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সবার খেয়াল রাখা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)
পাঁচ. অশ্লীল গান-বাদ্য শোনা থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। কারণ গান-বাদ্য মানুষের দিলকে নষ্ট করে দেয় আর তখন সে ভালো জিনিস বা ভালো পথে চলতে পারে না। যদি কারো মধ্যে এই মন্দ অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে এক সপ্তাহের জন্য পরীক্ষা করে দেখুন আপনার মধ্যে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আর মানুষের মধ্যে থেকে কেউ কেউ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য কিনে নেয়।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
ছয়. নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা।
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন,
যার হৃদয়ে কোরআনের কিছুই নেই, সে বর্জিত ঘরের মতো। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৩)
সাত. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহ আদায় করা।
নামাজ মানুষকে সব অনিষ্টতা থেকে দূরে রাখে এবং দ্বিনের ওপর অটল থাকা সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা করো।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
আট. নিজের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা
নিজের ভুলের ব্যাপারে সচেতন না হলে মানুষ অনেক সময় সত্যের দিশা থেকে বঞ্চিত হয়। ইরশাদ হয়েছে,
‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)
নয়. সবসময় দ্বীনের পথে থাকার বাসনা ও অনুশীলন
আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনদের পথই সত্য পথ। সত্যে অবিচল থাকতে চাইলে তাদেরই অনুসরণ করতে হবে। এছাড়াও সবসময় এই বাসনা থাকতে হবে যে কোরআন সুন্নাহর বাইরে কোনো যুক্তি বা বিবেকের আশ্রয় নেব না। তা না হলে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। আল্লাহ বলেন,
‘কারো কাছে সুপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস।’ (সুরা নিসা: ১১৫)
দশ. প্রতিপক্ষকে অবজ্ঞা না করা
ইসলামে প্রতিপক্ষকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। কেননা এতে নিজের মধ্যে অজ্ঞতা থাকলে তা স্পষ্ট হয় না। যেমনটি ইহুদি-খ্রিস্টানদের অভ্যাস। ইরশাদ হয়েছে,
‘ইহুদিরা বলে, খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই। খ্রিস্টানরা বলে, ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবে যারা কিছুই জানে না তারাও অনুরূপ কথা বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার মীমাংসা করবেন।’ (সুরা বাকারা: ১১৩)
এগারো. সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকা
পূর্ব ধারণা, সমাজে প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও সংস্কারের কারণে মানুষ গোমরাহির মধ্যে ডুবে থাকে। ফলে সে সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোরআন-সুন্নাহর কাছে নিজেকে সপে দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আর অবশ্যই আমি মানুষের জন্য এই কোরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ অস্বীকার করা ছাড়া ক্ষান্ত হলো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮৯)
বারো. স্রোতে গা ভাসানো যাবে না
স্রোতে গা ভাসানোর কারণে অনেক সময় মানুষ সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। জীবনটা শেষ হয়ে যায় সুন্নাহর বিপরীত কাজে। এজন্য অধিকাংশ লোক কী বলছে তার ওপর ভিত্তি করে বসে থাকা যাবে না। বরং কোরআন-সুন্নাহ কী বলছে তা তালাশ করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,
‘যদি তুমি বেশির ভাগ মানুষের কথামত চলো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’ (সুরা আনআম: ১১৬)
তোরো. বাহ্যিক অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না
বাহ্যিক অবস্থার বিচার করলে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ সত্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কেননা বাহ্যিক অবস্থা ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। ইরশাদ হয়েছে,
‘গ্রাম্য লোকেরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। বলো, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বলো, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।’ (সুরা হুজরাত: ১৪)
চৌদ্দ. দলিল অনুসন্ধান করা
সত্য-মিথ্যা নিয়ে শংসয় দেখা দিলে দলিল অনুসন্ধান সবচেয়ে জরুরি বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিবিশেষের বক্তব্য অথবা অনুমানের অনুসরণ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,
‘বলো, তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা বাকারা: ১১১)
পনেরো. বড় ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে—এ কথার ওপর বিশ্বাস রাখা
বড় ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে—এ কথা বিশ্বাসে রাখলে বাতিল থেকে বেঁচে যাওয়া সহজ হয়। এমনকি মানুষের বক্তব্যের একাংশ সঠিক, অন্যাংশ ভুল হতে পারে—সেই বিশ্বাসও রাখতে হবে। এই সচেতনতা হক-বাতিল চিনতে সাহায্য করবে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে স্বপ্নের কথা জানালে আবু বকর (রা.)-এর ব্যাখ্যা করলেন। নবী (স.) বললেন,
‘তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কিছুটা ঠিক বলেছ এবং কিছুটা ভুল করেছ।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩২৬৮)।
অতএব, ওস্তাদও যদি এমন কিছু বলেন যে ভুল-ভ্রান্তি দুটোরই অবকাশ রয়ে যায়, অর্থাৎ সুন্নাহয় এ কথার সমর্থনে বক্তব্য পাওয়া যায় না, তাহলে ওই কথা পুরোপুরি আমলে নেওয়া যাবে না।
ষোল. দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার দোয়া
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়াটি করতেন—
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলূব, সাব্বিত ক্বালবী আলা দীনিকা’
অর্থ: ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।’ (তিরমিজি: ২১৪০)
সতেরো. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা
প্রকাশ্যে ও গোপনে সবসময় এবং সর্বস্থানে অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করা। কারণ এর মাধ্যমেই ব্যক্তি নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং সৎকাজে অগ্রসর হয়। তাকওয়া তথা আল্লাহভীরুতার উপর সৎ কাজ নির্ভরশীল। আবু যর গিফারী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
‘তোমাকে আমি আল্লাহভীরুতার উপদেশ দিচ্ছি, কারণ তা সবকিছুর মূল। তুমি জিহাদ করবে, কারণ তা ইসলামের বৈরাগ্য। আর তুমি অসতেরোবশ্যই আল্লাহর যিকর এবং কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকবে। কারণ তা হচ্ছে আসমানে তোমার আত্মার প্রশান্তি স্বরূপ এবং যমীনে তোমার স্মরণ স্বরূপ’।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বিনের ওপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন।
সংগৃহীত