হজরত আদমের (আ.) ইন্তেকালের পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। শয়তানের ধোঁকায় মানুষ ধীরে ধীরে মূর্তিপূজা করতে শুরু করেছে। এমন সময় আল্লাহ তাআলা তাদের মাঝে একজন নবী পাঠান—যিনি এক আল্লাহর দাওয়াত দেন, শিরক না করার নসিহত করেন। তার নাম হজরত নুহ (আ.)।
হযরত নূহ (আঃ) এর প্রকৃত নামের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আবদুল গাফফার। কেউ কেউ বলেছেন, ‘ইয়াশকুর’। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৫, জালালাইন শরীফের হাশিয়াঃ পৃষ্ঠাঃ ২৮৮)। আবার কেউ বলেছেন, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আবদুল জব্বার। (হায়াতুল হায়ওয়ানঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১২)
কেউ কেউ বলেছেন, ইদ্রীস ছিল তাঁর নাম। (হায়াতে আদম (আঃ) পৃষ্ঠাঃ ৭৪)। ‘নূহ’ শব্দের অর্থ হলো ক্রন্দন। তিনি যেহেতু তাঁর উম্মতের গুনাহের জন্য অধিকতর ক্রন্দন করতেন, তাই তাঁর উপাধি হয়ে যায় ‘নুহ’। (হায়াতুল হায়ওয়ানঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১২)।
আদম আঃ থেকে নূহ আঃ পর্যন্ত দশ শতাব্দির ব্যবধান ছিল। যার শেষ দিকে মানবকূল শিরক ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহ তাআলা নূহ আঃ কে তাদের মাঝে রাসূল রূপে প্রেরণ করেন। তিনি ৯৫০ বছরে দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন পথভোলা মানুষকে সুপথে আনার জন্য দাওয়াতি কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
কিন্তু তার স্ব-জাতি তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর গজবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ জাতির ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মাধ্যমে জগতবাসী জানতে পেরেছে। হযরত নূহ আঃ, হযরত আদম আঃ এর দশম বা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ ছিলেন। সে জন্য তাকে ‘‘আবুল বাশার সানী” বা দ্বিতীয় আদম বলা হয়। তিনি দুনিয়াতে প্রথম রাসূল ছিলেন। (সহীহ মুসলিম, হা- ৩২৭)
কুরআনে তার নামে একটি সুরা আছে এবং ২৮টি সুরায় ৮১টি আয়াতে তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নূহ আঃ এর জন্ম
বর্তমান ইরাকের মুছেল নগরীর উত্তর প্রান্তে নূহ আঃ এর জন্ম হয়েছিল। তার চারটি পুত্র ছিল। হাম, সাম, ইয়াফিস ও ইয়াম বা কেনআন। প্রথম তিন জন নূহ আঃ এর প্রতি ঈমান আনেন, শেষজন কাফের হয়ে মহা প্লাবনে ডুবে মারা যায়। মহাপ্লাবনের শেষে তার তিন পুত্র হাম, সাম, ও ইয়াফিস এর বংশধর বেঁচে ছিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা ছাফফাত- ৭৭)। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি তার (নূহ আঃ) বংশধরগণকেই অবশিষ্ট রেখেছি। (সূরা ছাফ্ফাত- ৭৭)
রাসূল সাঃ বলেন,
সাম আরব জাতির আদি পিতা, হাম আফ্রিকীয়দের আদি পিতা ও ইয়াফিস রোমকদের (গ্রীক) আদি পিতা। (আহমদ,হা- ১৯৯৮২)
ফলে ইহুদী খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের লোকেরা নূহ আঃ কে তাদের আদি পিতা হিসেবে মর্যাদা দিয়ে থাকে।
ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, নূহ আঃ ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং মহাপ্লাবনের পর ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা আনকাবুত- ১৪/১৫)
তৎকালীন সামজিক অবস্থা
হজরত নুহ (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন বর্তমান সময়ের ইরাক ও সিরিয়া অঞ্চলে। এর আগে মানুষ কেবল কৃষিকাজ করত, সমাজে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। কিন্তু ওই সময় সমাজব্যবস্থা ধীরে ধীরে নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে শুরু করে এবং সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়—এক ভাগে ছিল অভিজাত শ্রেণি, অন্য ভাগে ছিল নিম্নশ্রেণি।
অভিজাত শ্রেণির মানুষ নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করত, তাদের নিচু চোখে দেখত। অভিজাতরা দেখতেই কেবল মানুষ ছিল, তাদের মাঝে মানুষের কোনো গুণ ছিল না। তাদের আচার-আচরণ ছিল জন্তু-জানোয়ারের মতো। (তাবিলুল আহাদিস, শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি, পৃষ্ঠা ১৮)
আদম আঃ এর সময় শিরক ও কুফরের মোকাবেলা ছিল না। তখন সবাই তাওহীদের অনুসারী ও একই উম্মত ছিলেন। (সূরা বাকারা- ২১৩)
কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্যে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে। নূহ আঃ এর স্বজাতি ওয়াদ্দা, সুওয়া, ইয়াগুছ ও ইয়াউক এবং নাসর প্রমুখ নেককার লোকদের উসিলায় আখিরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের কবর পাকা করে পূজা শুরু করে।
আদাম আঃ ও নূহ আঃ এর মধ্যবর্তী সময়কালে এই পাঁচ জন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর তাদের ভক্ত অনুসারীদেরকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এই সব নেককার মানুষের মূর্তি সামানে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহ তাআলার প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করে। তাদের মৃত্যুর পর তাদের বংশধরেরা মূর্তি পূজা অব্যহত রাখে, আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তি পূজার শিরকের সূচনা হয়। (ইবনে কাসীর, বুখারী, হা- ৪৯২০)
অতএব, পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হল নেককার মানুষের কবর পাকা করে ইবাদতগাহ বানানো এবং পরবর্তীতে তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করা। যা, আজও প্রায় সকল ধর্মে রূপ নিয়েছে।
নবুওয়ত প্রাপ্তি
হযরত নূহ (আঃ) এর সর্বমোট বয়স হয়েছিল এক হাজার পঞ্চাশ বছর। তাঁর নবুওয়ত প্রাপ্তির বয়স সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পঞ্চাশ বছর বয়সে নবুওয়ত লাভ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বায়ান্ন বছর, আবার কেউ বলেছেন একশত বছর। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
চল্লিশ বছর বয়সে রমজান মাসে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। তার পর থেকে দ্বীনের দাওয়াত দেন প্রায় নয়শত পঞ্চাশ বছর। কিন্তু মানুষ তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি, বরং নবী হিসাবে মানতে অস্বীকার করল। তারা বলতে লাগল তুমি তো আমাদের মতই মানুষ, আমাদের মত খাও, আমাদের মত পান কর, আমাদের মত ঘুমাও তবে কেমন করে নবী হলে। নুহ (আঃ) বলেন: হে আমার জাতি! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করোনা। তোমরা যদি আল্লাহ কে মানতে অস্বীকার করো তাহলে আল্লাহর আজাব তোমাদের উপর আসতে থাকবে। আমি তোমাদের কাছে কিছু চায়না শুধু তোমাদের মুক্তির জন্য সতর্ক করছি।
আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাইল (আঃ) কে হযরত নূহ (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি হযরত নূহ (আঃ) কে জাহাজ বানানোর নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। এই জাহাজ দুই বছরে তৈরী করা হয়েছিল। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৬)
দাওয়াত ও প্রচার
আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি নূহ আঃ কে তার স্বজাতির নিকট প্রেরণ করলাম তাদের উপর মর্মান্তিক আজাব আসার পূর্বেই তাদেরকে সর্তক করার জন্যে। নূহ আঃ তাদের কে বললেন, হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। তাতে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন। তবে এটি নিশ্চিত যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে তখন তা এতটুকু পেছানো হবে না, যদি তোমরা জানতে। (সূরা নূহ- ১/৪)
নূহ আঃ স্বজাতিকে দিন-রাত, প্রকাশ্যে ও গোপনে দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তার দাওয়াতে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে দেখলে পালিয়ে যেত, কখনো কানে আঙ্গুল দিত, কখনো তাদের চেহারা কাপড় দিয়ে ডেকে ফেলতো। তারা তাদের হঠকারীতা ও জেদে অটল থাকতো এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতো। (সূরা নূহ- ৬/৯)
হজরত নুহ (আ.) সাড়ে নয়শো বছর বেঁচে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়কালে অক্লান্তভাবে তিনি কেবল দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কী সকাল, কী বিকাল; কী দিন, কী রাত; প্রকাশ্যে কিংবা চুপিসারে—তিনি শুধু এ কথাই বলে গেছেন,‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নাই। তবু কি তোমরা সাবধান হবে না?’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৩)
কিন্তু কেউ তার দাওয়াতে সাড়া দেয়নি। বরং তার সম্প্রদায়ের লোকেরা কানে আঙ্গুল দিয়ে কিংবা নিজেকে কাপড় দিয়ে আড়াল করে সটকে পড়েছে, তার প্রতি উদ্ধত আচরণ করেছে। এটাই ছিল নিত্যদিনের গল্প। এরপরেও ধৈর্য ধরে তিনি শুধু দাওয়াত দিয়ে গেছেন। সব অবহেলা সয়ে নিয়ে শুধু আল্লাহর কথা বলেছেন।
তারা ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর নামে পাঁচটি মূর্তির পূজা করত। হজরত নুহ (আ.) কাউকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিলে তাদের নেতৃবৃন্দ বলত, তোমরা মূর্তিদের ত্যাগ করো না।
তবু নুহ (আ.) আল্লাহর নির্দেশিত কাজ করে যেতেন—মানুষকে এক আল্লাহর এবাদত করতে বলতেন। কোনোদিন দাওয়াতি কাজ ছেড়ে দেননি, কখনো নিরাশ হননি।
তার অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ বলল, ‘হে নুহ, তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে পাথর মেরে তোমার মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেব।’ (সুরা শুআরা, আয়াত ২৬৬) এরপরেও নুহ (আ) থেমে যাননি, তিনি উলটো দোয়া করেন, ‘হে খোদা, তুমি তাদের ক্ষমা করো, তারা বোঝে না।’
কিন্তু দিনের পর দিন শুধু অত্যাচারের পরিমাণ বাড়তেই থাকে। অভিজাত লোকেরা তাদের সন্তানদেরও শিখিয়ে দিত কীভাবে নবী ও মুসলিমদের প্রতি জুলুম করতে হবে।
নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বললেন,
‘হে আমার প্রতিপালক, তারা তো আমাকে অমান্য করছে, আর অনুসরণ করছে এমন ব্যক্তির—যার সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুর্দশা ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করবে না।’ (সুরা নুহ, আয়াত ২১)
এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা ওহি মারফত জানালেন,
‘তোমার কওমের যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া আর কেউ ঈমান আনবে না।’ (সুরা হুদ, আয়াত ৩৬)
হজরত নুহ (আ.) তখন কাতরকণ্ঠে ফরিয়াদ করলেন,
‘হে খোদা, আমাকে সাহায্য করুন। তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৬)
তিনি আরও বলেন,
‘আপনি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন, আমাকে ও মুমিনদের (তাদের হাত থেকে) রেহাই দিন।’ (সুরা শুআরা, আয়াত ১৮৮)
একদম শেষে তিনি বদদোয়া করেন,
‘হে আমার রব! পৃথিবীতে বসবাসকারী কাফিরদের একজনকেও আপনি ছাড় দিবেন না। আপনি যদি তাদেরকে রেহাই দেন, তাহলে তারা আপনার বান্দাদেরকে গুমরাহ করবে আর কেবল পাপাচারী কাফির জন্ম দিতে থাকবে।’ (সুরা নুহ, আয়াত ২৬-২৭)
এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে একটি বিশাল নৌকা তৈরি করতে বলেন। কীভাবে নৌকা বানাতে হবে আল্লাহ তাআলাই শিখিয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যখন আমার নির্দেশ আসবে আর চুলা (পানিতে) উথলে উঠবে, তখন প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া আর তোমার পরিবার-পরিজনদের নৌকায় তুলে নেবে, তবে তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে (ডুবে মরার) পূর্বসিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে। আর জালিমদের পক্ষে আমার নিকট আবেদন করো না, তারা (বন্যায়) ডুবে মরবেই।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৭)
যেহেতু ওই অঞ্চলে কখনোই বন্যা হয়নি, বছরের বেশির ভাগ সময় খরা থাকত, তাই কাফেরেরা নৌকা নিয়ে হাসি-মজাক করত। তারা ঠাট্টা করে বলত, নুহ এতদিন ছিলে নবী, নবুওয়তি ছেড়ে এখন হয়েছ কাঠমিস্ত্রি! অবশেষে নির্দিষ্ট দিন আসে।
হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ
কেউ কেউ বলেছেন এই জাহাজে লোকের সংখ্যা ছিল আশি জন। যার অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী ছিল। কেউ কেউ বলেছেন নারী পুরুষ মিলে সত্তর জন ছিল। (সাবীঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
কেউ কেউ বলেছেন নয়জন। তিনজন হযরত নূহ (আঃ) এর সন্তানদের মধ্য হতে অর্থাৎ হাম, সাম ও ইয়াফেস। এতদ্ব্যতীত আরো ছয়জন। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
আল্লাহ বললেন: হে নুহ আপনি পৃথিবীর সমস্ত বস্তু, প্রাণী এবং আপনার অনুগামীদের জোরায় জোরায় নৌকাই তুলে নিন, যাতে মহাপ্লাবনের পর আবার তারা বংশ বিস্তার করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে পারে।
অতঃপর তিনি পক্ষী, সমস্ত জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ, বীজ, ঘাস, ফল-ফসল সব কিছুই জোড়া জোড়া তুলে নিলেন। আল্লাহ আলামত হিসাবে জানিয়ে দিলেন যে, যখন রুটি বানানো উনুন থেকে পানি বাহির হবে তখনই মহাপ্লাবনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। একদিন দেখা গেল, তার গৃহতেই উনুন থেকে গরম পানি বের হতে থাকল। নুহ (আঃ)-এর স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাকে খবর দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ জিনিসপত্র তুলে প্রস্তুত হতে থাকলেন।
শুরু হল আল্লাহর আজাব। চতুর্দিক থেকে পানি আসতে শুরু করে। এমনকি সমস্ত অঞ্চলের জমিন ফেটে পানি বের হতে লাগল। বিশ্বজুড়ে শুধু মহাপ্লাবন। আকাশ থেকে বর্ষণ শুরু হল।
পৃথিবীর সমস্ত গাছপালা, ঘরবাড়ি পানির তলায় ডুবে গেল। একমাত্র নুহ নবীর নৌকা ভাসমান। নুহ নবীর তিন পুত্র – সাম, হাম, ইয়াফিস নৌকায় চড়লেও অপর পুত্র কিনাআন দাম্ভিকতার কারণে নৌকায় চড়লোনা। নুহ (আঃ) তার পুত্র কে আহ্বান করে বললেন: হে আমার পুত্র নৌকায় আরোহণ করো। এছাড়া আর রক্ষাকর্তা কেউ নেয়। কিনাআন উত্তরে বললেনঃ
আমি কোনও উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নেব, সে আমাকে প্লাবন থেকে বাঁচাবে। অর্থাৎ প্লাবনের পানি পাহাড়ের উপর পর্যন্ত যাবেনা না বলেই মনে করছিল।
সঙ্গে সঙ্গে নুহ (আঃ) বললেন: হে আমার পুত্র! আজ আর এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু কিনাআন তার অহংকারে ভর করেই সে কথা অস্বীকার করে এবং পাহাড়ে আরোহণ করতে লাগল। প্লাবনের পানি বাড়তে লাগল। নৌকা ভাসতে লাগল পাশাপাশি পর্বতে কিনাআনও উঠতে লাগল। কিনাআনের করুণ অবস্থা দেখে পিতা নুহ (আঃ) আকাশের প্রতি মুখ তুলে বলতে থাকেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো প্রতিশুতি দিয়েছেন যে আমার পরিবারসমূহকে ধ্বংস করবেন না। কিনাআন আমার পুত্র। হয়তো এখুনি পানিতে পড়ে মারা যাবে। এ কথা শুনে আল্লাহ পাক নুহ (আঃ)-কে সতর্ক করে বললেন: হে নুহ (আঃ)! সে তোমার জন্ম দেওয়া সন্তান হলেও ঈমানের ভিক্তিতে সে তোমার থেকে পুরো আলাদা। সুতরাং সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। তার জন্য তুমি এমন প্রার্থনা আমার কাছে করোনা। এরুপ অবস্থায় বিরাট একটি ঢেউ এসে কিনাআনকে ভাসিয়ে দেয়।
দুনিয়ায় থাকা এমন একজন কাফেরও ছিল না যে আল্লাহর এই আজাব থেকে বাঁচতে পেরেছে। বিশাল এই নৌকাটি ১৫০ দিন ভেসে বেড়ায়, তারপর মুহাররমের ১০ তারিখে জুদি পাহাড়ে নোঙর ফেলে। নুহ (আঃ)-এর নৌকা জু’দি (সিরিয়া) পর্বতের উপর অবতীর্ণ হল। নুহ (আঃ) এবং সহচরবৃন্দ, নৌকার অন্যান্য পশুপাখি মিলে আবার পৃথিবীর বুকে বসবাস শুরু করে। মহাপ্লাবনে নৌকাটি রজব মাসের ২ তারিখ থেকে মুহররম মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬ মাস ৮ দিন ভেসেছিল।
হযরত নূহ (আঃ) এর তিন পুত্র ছিল হাম,সাম ও ইয়াফেস। হিন্দুস্থান, সিন্ধু ও হাবশার লোকেরা হামের বংশধর। রোম, পারস্য ও আহলে আরব হলো সামের বংশধর। আর ইয়াফেসের বংশধর হলো ইয়াজুজ মাজুজ, তুর্কী ও সালাব জাতি। (বুস্তানে আবুল লাইস)
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনের ২৯টি সূরায় নূহ (আঃ)-এর ঘটনা তুলে ধরেছেন। কোন কোন সূরায় একাধিকবারও বর্ণিত হয়েছে। একটি সূরা তো পূর্ণাঙ্গভাবে তাঁর ও তাঁর জাতি প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাটির নাম ‘নূহ’।
(১) নূহ (আঃ) ছিলেন মানব জাতির জন্য প্রথম রাসূল। আর যিনি প্রথম হন তার কিছু বৈশিষ্ট্যও থাকে।
(২) নিজ জাতির মধ্যে সুদীর্ঘকাল তাঁর অবস্থান ছিল। তিনি এক নাগাড়ে ৯৫০ বছর স্বীয় জাতির মধ্যে দ্বীন প্রচার করেছেন।
(৩) তিনি ‘উলুল আযম’ বা দৃঢ়মনা রাসূল ছিলেন।
(৪) কুরআনে বেশী মাত্রায় তাঁর প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। ২৯টি সূরার ৪৩ স্থানে তাঁর কথা এসেছে। বলা চলে কুরআনের এক চতুর্থাংশ সূরায় প্রসঙ্গটি স্থান পেয়েছে।
‘নিশ্চয়ই আমি নূহকে তাঁর জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, যিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্য এক কঠিন দিবসের শাস্তির ভয় করি’ (আ‘রাফ ৭/৫৯)।
এই হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের সারকথা। তিনি তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের দিকে আহবান জানিয়েছিলেন এবং তাঁর বিরোধিতার কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। পরবর্তী স্তরে এসে যখন তাঁর জাতি তাঁর আহবানে সাড়া দিল না, উপরন্তু অহংকার প্রকাশ করল তখন তিনি যে দাওয়াত নিয়ে তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তা সূরা ইউনুসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
‘আপনি তাদেরকে নূহের ঘটনা পড়ে শুনান। যখন তিনি তাঁর জাতিকে বললেন, হে আমার জাতি! যদি তোমাদের নিকট আমার অবস্থান ও আল্লাহর আয়াতের মাধ্যমে আমার উপদেশ দান বড় কষ্টকর মনে হয় তাহ’লে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। সুতরাং তোমরা তোমাদের কাজ ও উপাস্যদেরকে গুছিয়ে নাও। তারপর তোমাদের কাজ যেন তোমাদের বিরুদ্ধেই দুঃখের আকর না হয় (সেদিকে লক্ষ্য রেখ)। অতঃপর তোমরা আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নাও এবং আমাকে কোন ছাড় দিও না’ (ইউনুস ১০/৭১)।
সূরা ‘হূদ’-এ নূহ (আঃ)-এর ঘটনা আরও বিস্তারিত আকারে এসেছে। তিনি যে তাদের সাথে বিতর্ক করেছেন, বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়েছেন, তাদের নিকট সৎপথের বিবরণ তুলে ধরেছেন সে সব কথা ঐ সূরায় তুলে ধরা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর কওমের লোকেরা বলে বসল,
‘হে নূহ! তুমি আমাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করছ এবং বিতন্ডায় অনেক বাড়াবাড়ি করছ। অতএব তুমি আমাদের যে (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ, তাই আমাদের জন্য নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদীদের একজন হও’ (হূদ ১১/৩২)।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্বন্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন,
‘আর নূহের নিকট অহি প্রেরণ করা হ’ল যে, আপনার জাতির মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত আর কেউ কখনও ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করছে সেজন্য আপনি দুঃখবোধ করবেন না। আপনি আমাদের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধান মত একটি জাহাজ তৈরী করুন। আর যালিমদের সম্বন্ধে আমাকে সম্বোধন করবেন না। ওরা ডুবে মরবে’ (হূদ ১১/৩৬, ৩৭)।
নূহ (আঃ)-এর ঘটনার সাথে জড়িত কিছু সংলাপ
(১) নূহ (আঃ) তাঁর জাতির মধ্যে কতদিন অবস্থান করেছিলেন?
জবাব : আল্লাহ বলেন,
‘আমি নূহকে তাঁর জাতির মাঝে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মাঝে ৫০ কম ১০০০ বছর অবস্থান করেছিলেন’ (আন‘কাবূত ২৯/১৪)।
(২) নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের রিসালাত বা বার্তা প্রচারে যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তা কী ছিল?
জবাব: তিনি তাদের সৎ পথে আনয়ন ও আল্লাহর দাসে পরিণত করতে সকল প্রকার বৈধ পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,
‘তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার জাতিকে রাত-দিন দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের পলায়নী মনোবৃত্তিই কেবল বৃদ্ধি করেছে। আপনি যাতে তাদের ক্ষমা করে দেন সে লক্ষ্যে যখনই আমি তাদের দাওয়াত দিয়েছি তখনই তারা তাদের কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে, বস্ত্র দ্বারা নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করেছে, হঠকারিতা দেখিয়েছে এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। তারপরও আমি তাদেরকে উচ্চঃস্বরে দাওয়াত দিয়েছি। তাদের সামনে প্রকাশ্যে বলেছি এবং সঙ্গোপনেও খুব বলেছি’ (নূহ ৭১/৫-৯)।
(৩) তাঁর কওমের প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?
জবাব : আল্লাহ বলেন,
‘তারা বলল, যেখানে হীন-তুচ্ছ লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে সেখানে আমরা কি করে তোমার উপর ঈমান আনতে পারি? (শু‘আরা ২৬/১১১)।
নূহ (আঃ) এভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে তাঁর জাতির লোকেরা মারমুখী হয়ে উঠল এবং বলতে লাগল,
‘হে নূহ! যদি তুমি প্রচারে বিরত না হও, তাহ’লে তুমি পাথরের আঘাতে ধরাশায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (শু‘আরা ২৬/১১৬)।
(৪) নূহ (আঃ)-এর প্রতি কতজন ঈমান এনেছিল?
জবাব : স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তাঁর প্রতি কেউ ঈমান আনেনি। এমনকি তাঁর এক স্ত্রী ও এক পুত্রও তাঁর উপর ঈমান আনেনি। আল্লাহ বলেন,
‘আমি বললাম, আপনি উহাতে (জাহাজে) প্রত্যেক যুগল হ’তে দু’টি করে তুলে নিন। (তুলে নিন) যাদের প্রতি আগে ভাগেই শাস্তির কথা নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের বাদে আপনার পরিবারের সদস্যদেরকে এবং (তুলে নিন) তাদের, যারা ঈমান এনেছে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে মাত্র স্বল্প সংখ্যক লোক ঈমান এনেছিল’ (হূদ ১১/৪০)।
যখন প্লাবন শুরু হয়ে গেল, আর নূহ (আঃ)-এর সেই কাফের পুত্র ডুবে যাওয়ার উপক্রম হ’ল, তখন তিনি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেন-
‘নূহ তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র তো আমার পরিবারভুক্ত। আর আপনার প্রতিশ্রুতিও নিশ্চয়ই সত্য। আপনি শ্রেষ্ঠতম বিচারকও। তিনি বললেন, ‘হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়, সে অসৎ কর্মপরায়ণ’ (হূদ ১১/৪৫, ৪৬)।
আল্লাহ কাফেরদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরছেন নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীকে। তারা দু’জন ছিল আমার দু’জন অন্যতম সৎবান্দার বিবাহধীন। কিন্তু তারা তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে আল্লাহর কোপ হ’তে তাঁরা তাদের কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারেননি। বরং বলা হ’ল,
‘তোমরা দু’জন অপরাপর প্রবেশকারীদের সাথে আগুনে প্রবেশ কর’ (তাহরীম ৬৬/১০)।
(৫) শেষ পর্যন্ত নূহ (আঃ) কী বলেছিলেন?
জবাব : আল্লাহ বলেন,
‘তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! আমার জাতি আমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং আপনি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়ছালা করে দিন। আর আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনদেরকে মুক্তি দিন’ (শু‘আরা ২৬/১১৭-১১৮)।
‘অনন্তর তিনি তাঁর প্রতিপালককে আহবান করলেন যে, আমি পরাস্ত; সুতরাং আপনি সাহায্য করুন’ (ক্বামার ৫৪/১০)।
‘নূহ বললেন, হে আমার প্রভু, ধরিত্রীর বুকে আপনি কোন কাফের গৃহবাসীকে রেহাই দিবেন না। আপনি যদি ওদের রেহাই দেন তাহ’লে ওরা আপনার বান্দাদেরকে পথহারা করবে, আর নিজেরা পাপাচারী কাফের ব্যতীত আর কিছু জন্ম দিবে না’ (নূহ ৭১/২৬, ২৭)।
(৬) এই কঠিন দুস্তর পারাবার পাড়ি দেওয়ার পর নূহ (আঃ)-এর জন্য বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল :
আল্লাহ বলেন,
‘তিনি তাঁর রবকে ডেকে বললেন, আমি পরাস্ত, সুতরাং আমাকে সাহায্য করুন। ফলে আমি মুষলধারে বারিপাত দ্বারা আকাশের দ্বার খুলে দিলাম এবং ভূমন্ডলে অনেক ঝর্ণা প্রবাহিত করলাম। ফলে একটি নির্ধারিত পর্যায়ে পানির প্রবাহ সম্মিলিত হ’ল। আমি তখন তাকে কাষ্ঠফলক ও পেরেক নির্মিত জলযানে আরোহণ করালাম, যা আমার গোচরে চলছিল। ইহা ছিল তার জন্য প্রতিদান, যাকে অমান্য করা হয়েছিল। আর আমি উহাকে নিদর্শন স্বরূপ রেখে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি’? (ক্বামার ৫৪/১০-১৫)।
এই হ’ল নূহ (আঃ)-এর ঘটনা। তিনি প্রায় দশ দশটি শতাব্দী তাঁর কওমের মধ্যে কাটিয়েছেন। এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরও কি ফল দাঁড়িয়েছে?
(ক) স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তাঁর কওম তাঁর উপর ঈমান আনেনি। কথিত আছে, তাদের সংখ্যা নূহ (আঃ) সহ তেরজন। ইবনু ইসহাক্ব বলেছেন, তারা হ’লেন নূহ, তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম, ইয়াফিছ, তাদের তিন স্ত্রী এবং অন্য দু’জন লোক।
(খ) তাঁর স্ত্রী ও এক পুত্র তাঁর উপর ঈমান আনেনি। ইতিপূর্বে সে কথা বলা হয়েছে। অথচ তারা ছিল তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠজন।
(গ) এতদসত্ত্বেও তাঁকে বিজয়ী ও সাহায্যপ্রাপ্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। তাঁর জীবনে খুবই বড় মাপের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। নিম্নের কথা ক’টিতে তা বুঝা যায়।
(৭) দশ দশটি শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও তিনি ধৈর্যশীল ও স্থিতিশীল থেকেছেন। তাঁর জাতির ষড়যন্ত্রের ফাঁদে তিনি পা দেননি এবং তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপেও প্রভাবিত হননি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তিনি জাহায তৈরী করছিলেন আর যখনই তাঁর জাতির নেতৃবর্গ তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখনই তারা তাকে বিদ্রূপ করছিল। তিনি বলছিলেন, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে বিদ্রূপ কর তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে বিদ্রূপ করব- যেমন তোমরা করছ’ (হূদ ১১/৩৮)।
(৮) তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হ’তে আল্লাহ কর্তৃক তিনি হেফাযতে ছিলেন। তারা যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল তা তাদের কথাতেই প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। আল্লাহ বলেন,
‘তারা বলল, হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও তাহ’লে তুমি প্রস্তরাঘাতের সম্মুখীন হবে’ (শু‘আরা ২৬/১১৬)।
(৯) তাঁর জাতির যারা ঈমান আনেনি সলিল-সমাধির মাধ্যমে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ বলেন,
‘যারা আমার বিধানাবলীকে অস্বীকার করেছিল আমি তাদের পানিতে নিমজ্জিত করেছিলাম। তারা ছিল একটি জ্ঞানান্ধ জাতি’ (আ‘রাফ ৭/৬৪)।
(১০) নূহ (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী মুমিনগণ ডুবে মরা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,
‘অনন্তর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা জাহাযে ছিলেন সবাইকে মুক্তি দিয়েছিলাম’ (আ‘রাফ ৭/৬৪)।
‘আমি তাকে তক্তা ও কীলক নির্মিত জলযানে আরোহণ করিয়েছিলাম, যা আমার দৃষ্টিপথে চলছিল’ (ক্বামার ৫৪/১৩, ১৪)।
সংগৃীত