ইবাদত পালনের জন্য ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্রতা অর্জন সাধারণত অজু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, কোনো স্থানে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, কিংবা পানি ব্যবহার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম তায়াম্মুম করার অনুমতি দিয়েছে।
যেসব ইবাদত করা যাবে
তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়া যাবে, কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে, কাবা শরিফ তাওয়াফ করাসহ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল; সব ধরনের ইবাদত করা যাবে।
এ ছাড়াও যেসব ইবাদতে অজু বা পবিত্রতা অপরিহার্য নয়, সেসব ক্ষেত্রে সমস্যা ছাড়াও তায়াম্মুম করা যাবে। যেমন সব সময় পবিত্র থাকা, পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানো ইত্যাদি।
তায়াম্মুমের ফরজ
তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি। এ তিনটির কোনোটি বাদ পড়লে তায়াম্মুম হবে না। তাহলো-
১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত বা ইচ্ছা করা।
২. উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে পুরো মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করা।
৩. উভয় হাত মাটিতে মেরে উভয় হাত কনুইসহ একবার মাসেহ করা।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩)
তায়াম্মুমের সুন্নত: তায়াম্মুমের সুন্নত ৬টি।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র মাটির ওপর থাপড়াতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধূলা লেগে যায়। অতঃপর উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার মাটিতে হাত থাপড়িয়ে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়। অর্থাৎ,
১. প্রথমেই তায়াম্মুমের ইচ্ছা করা
২. তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’
৩. উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে একটু সামনে-পেছনের দিকে নিয়ে ভালোভাবে স্পর্শ নেওয়া
৪. মাটিতে হাত মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা
৫. মাটিতে হাত মারার সময় আঙুলগুলো ফাঁক করে রাখা
৬. উভয় হাতের তালু দ্বারা পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করা
৭. আগের মতো উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে একটু সামনে-পেছনে দিকে নিয়ে ভালোভাবে স্পর্শ নেওয়া
৮. বামহাতের তালু দ্বারা ডানহাত কনুইসহ মাসেহ করা
৯. ডানহাতের তালু দ্বারা বামহাত কনুইসহ মাসেহ করা
১০. মাসেহের ধারাবাহিকতা যথাযথভাবে ঠিক রাখা
১১. বিরতিহীনভাবে তায়াম্মুম করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।
শর্তাবলী:
অযু বা গোসলের পরির্বতে নিম্নোক্ত অবস্থায় তায়াম্মুম করতে হয়:
১। আশেপাশে ১.৭ কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া না যায়।
২। পানি পেতে যদি শত্রুর, সাপ কিংবা বিপদজনক পশুর আক্রমণের ভয় থাকে।
৩। এত অল্প পানি থাকে যে তা গোসল বা অযুতে ব্যবহার করলে খাওয়ার পানির সংকট হবে।
৪। কেউ তার সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা অথবা বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে জানতে পারে যে, পানি ব্যবহার তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৫। পানি কিনে ব্যবহার করার মত যথেষ্ট অর্থ না থাকে।
৬। পানির দাম খুব বেশি হয়।
৭। পানি ব্যবহারের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা হলে।
৮। পাশেই কূপ বা পুকুর আছে, কিন্তু পানি এত নিচে যে তা থেকে পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
৯। প্রবল ধারণা যে অজু করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ ছুটে যাবে, তখন তায়াম্মুম করা যাবে। কারণ সেগুলোর কাজা বা বিকল্প নেই।
যেসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে:
১. পবিত্র মাটি বা মাটির সমজাতীয় জিনিস দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে।
২. এ মাটি হবে এমন, যা সাধারণত স্বাভাবিক আগুনের তাপে জ্বলে না, ছাই হয় না এবং গলেও যায় না।
৩. পবিত্র মাটিসহ পোড়ামাটি, পাথর, চুনাপাথর, কাঁচা-পাকা ইট, টাইলস, সিমেন্ট ও পাথরের মেঝে বা দেওয়াল ইত্যাদি।
৪. দেওয়াল কিংবা মেঝেতে ক্যামিকেলের প্রলেপযুক্ত টাইলস কিংবা ক্যামিকেল এবং ডিস্টেম্বার রং করা থাকে, তা দিয়ে তায়াম্মুম হবে না।
মৃত ব্যক্তির তায়াম্মুম
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় পানি না-পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করাতে হয়।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়
যদি প্রবল ধারণা থাকে যে, শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে; তাহলে তায়াম্মুমের জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব সময়ে ইবাদত সম্পন্ন করতে হবে।
তায়াম্মুম ভাঙার কারণ
প্রতি ওয়াক্তের জন্য আলাদা আলাদা তায়াম্মুম করতে হবে। যেসব কারণে অজু ভেঙে যায় এবং গোসল ওয়াজিব হয়; সেসব কারণে তায়াম্মুম ভাঙবে। এ ছাড়া পানি পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে সক্ষমতা এলে তায়াম্মুম ছুটে যাবে।
মনে রাখতে হবে, কঠিন সমস্যা ছাড়া অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তার হুকুম-আহকাম পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সংগৃহীত