“সালাত” -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।ইসলামের বিভিন্ন বর্ননা অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় জোহর, আসর ও এশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট জোহর, আসর ও এশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।
কারো ওপর নামাজ ফরয হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ-
- মুসলমান হওয়া
- সাবালক হওয়া এবং
- সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া।
নিম্নের পাঁচটি কারণ সংঘটিত হলে নামাজ বৈধ হয়”
- নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হলে। অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না, যদি তা ঠিক ওয়াক্তেও হয়।
- কাবামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যাক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।
- সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ (টাখনুর উপরে) পর্যন্ত, আর নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি ও দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর।
- পরিধেয় কাপড়, শরীর ও নামাজের স্থান পরিষ্কার বা পাক-পবিত্র হতে হবে।
- অযু, গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা আর্জন করতে হবে।
নামাযের ফরজ
নামাযের ফরজ মোট ১৩ টি। আহকাম ৬ টি। আরকান ৭ টি। নামাযের বাহিরের কাজগুলিকে আহকাম বলে। আর নামাযের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে।
আহকাম
১. শরীর পাক
৬. নামাজের নিয়ত করা।
আরকান
১. তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করা
২. দাঁড়িয়ে নামায পড়া
৩. আলহামদু সূরার (সূরা ফাতিহা) সাথে কোরআন থেকে অন্য একটি সূরা পড়া
৪. রুকু করা
৫. সিজদা করা
৬. শেষ বৈঠক করা
৭. নামাযের শেষে কোন কাজ বা কথা বলে (নামায হতে) বের হওয়া
নামাজের নিয়ম
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয় তবে অসুস্থ হলে সে ক্ষেত্র বসে, শুয়ে, এমন কি এশারার মাধ্যমে নামাজ পড়তে পারবে। প্রথমে নামাজের নিয়াত করতে হয়।নামাজের ধাপ বা অংশকে রাকাত বলা হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পাঠের পর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়।রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তার পর সিজদা দিতে হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে “আত্তাহিয়াতু” দোয়া পড়তে হয়।নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে “আত্তাহিয়াতু” দোয়ার সাথে “দরূদ শরীফ” পড়তে হয়। নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়।রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ’
নামাযের ওয়াক্ত ও রাকাত
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামায ছাড়াও এশা’র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলমানরা আদায় করে থাকে।কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
| নাম | সময় | ফরযের পূর্বে | ফরয | ফরযের পর |
|---|---|---|---|---|
| ফযর |
ঊষা থেকে সূর্যোদয় | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ২ রাকাত | – |
| যুহর |
ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
| আসর | যোহরের শেষ ওয়াক্ত থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ পূর্ব পর্যন্ত অন্য মতে সূর্যস্তের পূর্ব পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | – |
| মাগরিব | সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত | – | ৩ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
| ইশা |
গোধূলি থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
| বিতর |
ইশার পর থেকে ফজরের পূর্র পর্যন্ত | ১ বা ৩ বা ৫ বা ৭ বা ৯ বা ১১ বা ১৩ |
নবীজি প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন। শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয়। এশা নামাজ আদায় করার পর বেজোড় সংখ্যক রাকাত বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়।
বিশেষ নামাজ:
- তাহাজ্জুদের নামাজ। এশা’র পর এবং ফজরের আগে এই নামাজ পড়তে হয়।
- তারাবীহ্ এর নামাজ : শুধু মাত্র রমজান মাসে এই নামাজ পড়তে হয়। এশা’র নামাজের ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পরে এবং বিতর নামাজ এর আগে ২০ রাকাত তারাবীহ্ এর নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবীর ছালাত ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ৩ রাকাত বিতর সহ মোট ২৩ রাকাত আদায় করা সুন্নাত।
- জানাযার নামাজ : কোন মুসলমান মারা গেলে, মৃত দেহ কবর দেওয়ার আগে এই নামাজ পড়তে হয়। জানাযার নামাজ ফরযে কেফায়া।
- ঈদের নামাজ। প্রতি ঈদে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া ওয়াজিব।
| নামাজ | ||||||||||||||||||||
|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| নামাজের প্রকারভেদ |
|
|||||||||||||||||||
| নামাজের একক (রাকাত) এবং অন্যান্য অংশ |
|
|||||||||||||||||||
| মসজিদ |
|
|||||||||||||||||||
| শর্তসমূহ |
|
|||||||||||||||||||
রাসূল সা. বলেছেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ যারা সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫টি বিশেষ পুরুস্কার দান করে সম্মানিত করবেন-
(১) তার থেকে মৃত্যুও কষ্ট দূর করে দিবেন।
(২) কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন।
(৩) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে ডান হাতে আমালনামা দান করবেন।
(৪) তড়িত গতিতে ফুলসিরাত পার করবেন।
(৫) বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন ।
অতএব সঠিকভাবে নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা শিখে নেওয়া জরুরী । রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ তা’আলা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।