হযরত ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মা হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ঐ সময়ে ইবরাহীমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। শিশু বয়সে তাঁকে ও তাঁর মাকে পিতা ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মক্কার বিজন ভূমিতে রেখে আসেন। সেখানে ইবরাহীমের দো‘আর বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে যমযম কূপের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইয়ামনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদনক্রমে সেখানে আবাদী শুরু হয়। ১৪ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর ত্যাগ ও কুরবানীর ঘটনা। পিতা ইবরাহীম কর্তৃক পুত্র ইসমাঈলকে স্বহস্তে কুরবানীর উক্ত ঘটনায় শতবর্ষীয় পিতা ইবরাহীমের ভূমিকা যাই-ই থাকুক না কেন চৌদ্দ বছরের তরুণ ইসমাঈলের ঈমান ও আত্মত্যাগের একমাত্র নমুনা ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ না করলে পিতার পক্ষে পুত্র কুরবানীর ঘটনা সম্ভব হ’ত কি-না সন্দেহ। তাই ঐ সময় নবী না হ’লেও নবীপুত্র ইসমাঈলের আল্লাহভক্তি ও দৃঢ় ঈমানের পরিচয় ফুটে উঠেছিল তাঁর কথায় ও কর্মে। এরপর পিতার সহযোগী হিসাবে তিনি কা‘বা গৃহ নির্মাণে শরীক হন এবং কা‘বা নির্মাণ শেষে পিতা-পুত্র মিলে যে প্রার্থনা করেন, আল্লাহ পাক তা নিজ যবানীতে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/১২৭-১২৯)।
এভাবে ইসমাঈল স্বীয় পিতার ন্যায় বিশ্বের তাবৎ মুমিন হৃদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রশংসায় সূরা মারিয়াম ৫৪ আয়াতে বলেন, তিনি ছিলেন ওয়াদা রক্ষায় সত্যাশ্রয়ী’ যা তিনি যবহের পূর্বে পিতাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা কার্যকর করুন। আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ছবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’ (ছাফফাত ৩৭/১০২)।
অতঃপর কা‘বা নির্মাণকালে পিতা-পুত্রের দো‘আর (বাক্বারাহ ১২৭-২৯) বরকতে প্রথমতঃ কা‘বা গৃহে যেমন হাযার হাযার বছর ধরে চলছে তাওয়াফ ও ছালাত এবং হজ্জ ও ওমরাহর ইবাদত, তেমনি চলছে ঈমানদার মানুষের ঢল। দ্বিতীয়তঃ সেখানে সারা পৃথিবী থেকে সর্বদা আমদানী হচ্ছে ফল-ফলাদীর বিপুল সম্ভার। তাঁদের দো‘আর তৃতীয় অংশ মক্কার জনপদে নবী প্রেরণের বিষয়টি বাস্তবায়িত হয় তাঁদের মৃত্যুর প্রায় আড়াই হাযার বছর পরে ইসমাঈলের বংশে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের মাধ্যমে। ইসমাঈল (আঃ) মক্কায় আবাদকারী ইয়ামনের বনু জুরহুম গোত্রে বিবাহ করেন। তাদেরই একটি শাখা গোত্র কুরায়েশ বংশ কা‘বা গৃহ তত্ত্বাবধানের মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হয়। এই মহান বংশেই শেষনবীর আগমন ঘটে।
পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টান্ত :
তিনি পিতার প্রতি কেমন শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত ছিলেন, তা নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। হাজেরার মৃত্যুর পর ইবরাহীম (আঃ) যখন ইসমাঈলকে দেখতে যান, তখন তার স্ত্রীকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব অভাবে ও কষ্টের মধ্যে আছি’। জবাবে তিনি বলেন, তোমার স্বামী এলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বলো যে, তিনি যেন দরজার চৌকাঠ পাল্টে ফেলেন’। পরে ইসমাঈল বাড়ী ফিরলে ঘটনা শুনে বলেন, উনি আমার আববা এবং তিনি তোমাকে তালাক দিতে বলেছেন। ফলে ইসমাঈল স্ত্রীকে তালাক দেন ও অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেন। পরে একদিন পিতা এসে একই প্রশ্ন করলে স্ত্রী বলেন, আমরা ভাল ও সচ্ছলতার মধ্যে আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। ইবরাহীম তাদের সংসারে বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তাকে বলেন, তোমার স্বামী ফিরলে তাকে বলো যেন দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখেন ও মযবূত করেন’। ইসমাঈল ফিরে এলে ঘটনা শুনে তার ব্যাখ্যা দেন ও বলেন, উনি আমার পিতা। তোমাকে স্ত্রীত্বে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এই ঘটনার কিছু দিন পর ইবরাহীম পুনরায় আসেন। অতঃপর পিতা-পুত্র মিলে কা‘বা গৃহ নির্মাণ করেন।
প্রথম বিশুদ্ধ আরবী ভাষী :
ইসমাঈল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সর্বপ্রথম ‘স্পষ্ট আরবী’ ভাষা ব্যক্ত করেন ইসমাঈল। যখন তিনি ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সের তরুণ’।
এখানে ‘স্পষ্ট আরবী’ অর্থ ‘বিশুদ্ধ আরবী ভাষা’ এটাই ছিল কুরায়শী ভাষা, যে ভাষায় পরে কুরআন নাযিল হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সকল ভাষাই আল্লাহ কর্তৃক ইলহামের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ইসমাঈল ছিলেন বিশুদ্ধ কুরায়শী আরবী ভাষার প্রথম ইলহাম প্রাপ্ত মনীষী। এটি ইসমাঈলের জন্য একটি গৌরবময় বৈশিষ্ট্য। এজন্য তিনি ছিলেন ‘আবুল আরব’ বা আরবদের পিতা।
অন্যান্য নবীগণের ন্যায় যদি ইসমাঈল ৪০ বছর বয়সে নবুঅত পেয়ে থাকেন, তাহলে বলা চলে যে, ইসমাঈলের নবুঅতী মিশন আমৃত্যু মক্কা কেন্দ্রিক ছিল। তিনি বনু জুরহুম গোত্রে তাওহীদের দাওয়াত দেন। ইস্রাঈলী বর্ণনানুসারে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন’। কা‘বা চত্বরে রুকনে ইয়ামানীর মধ্যে তাঁর কবর হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। তবে মক্কাতেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, এটা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়।
ইসমাঈলের বড় মহত্ত্ব এই যে, তিনি ছিলেন ‘যবীহুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর রাহে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী এবং তিনি হলেন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মহান পূর্বপুরুষ। আল্লাহ তাঁর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন। তাঁর সম্পর্কে ইবরাহীমের জীবনীতে আলোচিত হয়েছে।
যবীহুল্লাহ কে?
উক্ত বিষয়ে মূলত: কোন মতভেদ নেই। কেননা মুসলিম ও আহলে কিতাব প্রায় সকল বিদ্বান এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)। কেননা তিনিই ইবরাহীমের প্রথম পুত্র এবং হাজেরার গর্ভে জন্ম। তিনি মক্কাতেই বড় হন। সেখানেই বসবাস করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। কুরবানীর মহান ঘটনা মক্কাতেই ঘটে। তিনি কখনোই কেন‘আনে আসেননি। পিতা ইবরাহীম তাকে নিয়ে মক্কায় কা‘বা গৃহ নির্মাণ করেন।
পক্ষান্তরে ইসহাকের জন্ম হয় কেন‘আনে বিবি সারাহর গর্ভে ইসমাঈলের প্রায় চৌদ্দ বছর পরে। শৈশবে তিনি মক্কায় এসেছেন বলে জানা যায় না। পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারায় ১৩৩,৩৬, ৪০; সূরা আলে ইমরান ৮৪, নিসা ১৬৩, ইবরাহীম ৩৯, ছাফফাত ১০০-১১৩ আয়াতগুলিতে সর্বত্র ইসমাঈলের পরেই ইসহাক ও ইয়াকূবের আলোচনা এসেছে। এব্যাপারে সকল ইস্রাঈলী বর্ণনা একমত যে, ইসমাঈলের জন্মের সময় ইবরাহীমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। পক্ষান্তরে ইসহাক জন্মের সময় ইবরাহীমের বয়স ছিল অন্যূন ১০০ বছর এবং সারাহর বয়স ছিল অন্যূন ৯০ বছর।
নিঃসন্তান ইবরাহীম বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট একটি ‘নেককার সন্তান’ প্রার্থনা করেছিলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান কর।’ ‘অতঃপর আমরা তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।’ (ছাফফাত ৩৭/১০০-০১)। আর তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান ইসমাঈল। অতঃপর ইসমাঈলের কুরবানীর ঘটনা শেষে যখন ইবরাহীম কেন‘আনে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন সেখানে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। যারা লূত-এর কওমকে ধ্বংস করতে যাওয়ার পথে তাঁর বাড়ীতে যাত্রা বিরতি করেন এবং সারাহর গর্ভে ইসহাক জন্মের ও তার ঔরসে পরবর্তীতে ইয়াকূব জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন (হূদ ১১/৭১)। সূরা ছাফফাত ১০১ আয়াতে ইবরাহীমকে একটি ধৈর্য্যশীল সন্তানের সুসংবাদ শুনানোর পরে কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা শেষে ১১২ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর আমরা তাকে ইসহাক জন্মের সুসংবাদ দিলাম যিনি নবী হবেন ও সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত হবেন’ (ছাফফাত ৩৭/১১২)। উক্ত আয়াতগুলির বর্ণনা পরম্পরায় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, প্রথম সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তানটি ছিলেন ইসমাঈল, যাকে কুরবানী করা হয়। অতঃপর সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তান ছিলেন ইসহাক। যেমন ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দো‘আ করেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দান করেছেন ইসমাঈল ও ইসহাককে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অবশ্যই দো‘আ কবুলকারী’ (ইবরাহীম ১৪/৩৯)। এখানে তিনি ইসমাঈলের পরে ইসহাকের নাম উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত আলোচনায় একথা স্পষ্ট হয় যে, যবীহুল্লাহ ছিলেন ইবরাহীমের প্রথম সন্তান ইসমাঈল।
নির্বাসন ও জমজম কূপ সৃষ্টি
হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর জন্মের কিছুদিন পর ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে ও তাঁর মাকে মক্কার ফারান পর্বতের উপত্যকায় বিজন ভূমিতে একটি বড় গাছের নিচে রেখে আসেন। বস্তুত এটি ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় পরীক্ষা। তিনি তাঁদের খাবারের জন্য এক থলে খেজুর ও এক মশক পানি দিয়ে আসেন এবং তাদের খাদ্য-পানীয় ও হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন।
বিবি হাজেরা তাঁর সন্তানকে বুকের দুধ পান করিয়ে লালন-পালন করতে থাকেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের পানি ও খাবার ফুরিয়ে যায়। দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল পানির পিপাসায় ছটফট করতে থাকেন। তিনি শিশুর কান্না সহ্য করতে না পেরে পানি ও খাবারের সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ পাহাড়দ্বয়ে সাতবার ছোটাছুটির পরেও কোথাও পানি কিংবা খাবার পেলেন না। অবশেষে ইসমাঈলের কাছে ফিরে এসে দেখতে পান যে, আল্লাহর অসীম কুদরতে শিশু ইসমাঈলের পায়ের আঘাতে সে স্থানে পানির স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এটাই হলো জমজম কূপের উৎস। হযরত হাজেরা (আ.) ঐ কূপ থেকে নিজে এবং তার শিশুপুত্র ইসমাঈলকে পানি পান করান। তিনি মশক ভরে পানি রাখলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।
কুরবানি
ইসমাঈল (আ.) যখন ১৩ কিংবা ১৪ বছরের যুবক, তখন হযরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নযোগে পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানির জন্য আদিষ্ট হন। নিঃসন্দেহে এটি ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি কঠিন পরীক্ষা। স্বপ্ন থেকে জাগ্রত হয়ে ইবরাহিম (আ.) পুত্রকে বললেন, “হে আমার সন্তান! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কুরবানি করছি। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কী? তখন তিনি বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে আপনি ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাবেন।’ (সূরাআস সাফফাত, আয়াত: ১০২)
হযরত ইবরাহিম (আ.) মিনা প্রান্তরে প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানি করতে শুরু করলেন। এমন সময় তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আওয়াজ শুনতে পেলেন, ‘হে ইবরাহিম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সূরা আস সাফফাত, আয়াত: ১০৫)।
আল্লাহর ইচ্ছায় পুত্র ইসমাঈল (আ.) এর স্থলে একটি সাদা দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল আর ইসমাঈল (আ.) দুম্বার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। আল্লাহ তা‘আলা এ ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ইসমাঈলকে এক মহান যবেহের বিনিময়ে মুক্ত করলাম এবং একে আমি পরবর্তী লোকদের মধ্যে স্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা করলাম।’ (সূরা আস সাফফাত, আয়াত: ১০৭-১০৮) এ স্মৃতির সম্মানার্থে কুরবানি করা উম্মতে মোহাম্মাদির উপর ওয়াজিব।
কাবাগৃহ নিৰ্মাণ
কাবাঘর সর্বপ্রথম ফেরেশতাগণ এবং পরে হযরত আদম (আ.) পুনর্নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর হুকুমে হযরত ইসমাঈল (আ.) এর সহযোগিতায় কাবা ঘর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। কাবা ঘর নির্মাণের পর তাঁরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শোনেন এবং জানেন।’ (সূরা আল বাকরা, আয়াত: ১২৭)।
ইসমাঈল (আ.)-এর গুণাবলি ও মহত্ত্ব
কুরআন মাজিদে ইসমাঈল (আ.)-এর সততা, ধৈর্য, সহনশীলতা, ওয়াদা পালন, সালাতের হেফাজতকারী, পরিবারকে সালাত আদায়ের নির্দেশদানকারী এবং আল্লাহর ইবাদাতের দিকে মানুষকে আহ্বানকারী প্রভৃতি গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর প্রশংসায় পবিত্র কুরআনের ৯টি সূরার ২৫টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে। তিনি ছিলেন যাবীহুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর সমীপে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী।
তিনি বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল আরবি ভাষী ছিলেন। নবি (সা.) বলেন, সর্বপ্রথম ‘স্পষ্ট আরবি’ ভাষা ব্যবহার করেন হযরত ইসমাঈল (আ.) তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। (আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ) ইসমাঈল (আ.) ছিলেন কুরাইশী আরবি ভাষায় ওহীপ্রাপ্ত প্রথম নবি। এটি ইসমাঈল (আ.) এর জন্য একটি অনন্য গৌরবের বিষয়। এ জন্য তাঁকে আবূল আরাব বা আরবদের পিতা বলা হয়।
উপাধি
বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি জনৈক ব্যক্তির সাথে একটি নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করার অঙ্গীকার করেন। সে লোকটি কথা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে না আসলেও তিনি তার জন্য তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন। অতঃপর তৃতীয় দিন লোকটির সাথে তাঁর সেখানে দেখা হয়। (ইবনে কাছির) নিজের ওয়াদা রক্ষার জন্য তিন দিন পর্যন্ত কষ্ট করে অপেক্ষা করেছিলেন বলে তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা সাদেকুল ও‘আদ বা অঙ্গীকার পালনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কুরআন মাজিদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তিনি ওয়াদা পালনে সত্যনিষ্ঠ ছিলেন এবং তিনি আল্লাহর রাসুল ও নবি।’ ( সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৪)
মৃত্যু
হযরত ইসমাঈল (আ.) ১৩৭ বছর বয়সে মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন (আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ)। প্রসিদ্ধ মত অনুসারে তাঁকে কাবার হাতীমে তাঁর মা হাজেরার কবরের পাশে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহর প্রতি ইসমাঈল (আ.)-এর অগাধ বিশ্বাস ও আনুগত্য, ত্যাগ এবং পিতৃভক্তি, অঙ্গীকার পালন ইত্যাদি আমাদের জীবনের অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
শোয়াইব নামের অর্থ আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহপ্রাপ্ত। তিনি ইবরাহিম আ:-এর বংশোদ্ভূত নবী। শোয়াইব আ:-এর পিতা ফাহমিল, ফাহমিলের পিতা এছজার এবং তার পিতা মাদইয়ান। ইবরাহিম আ:-এর পুত্র মাদইয়ানের নামে জনপদটি পরিচিত হয়েছে। হজরত শোয়াইব আ: এই জনপদে প্রেরিত হয়েছিলেন। ইনি হজরত মূসা আ:-এর শশুর ছিলেন। কওমে লুতের ধ্বংসের অনতিকাল পরে কওমে মাদইয়ানের প্রতি তিনি প্রেরিত হন। চমৎকার বাগ্মিতার কারণে তিনি নবীদের মধ্যে সেরা বাগ্মী নামে খ্যাত ছিলেন। কোথাও কোথাও ‘আছহাবুল আইকাহ’ বলা হয়েছে যার অর্থ জঙ্গলের বাসিন্দারা। মাদইয়ান ছিলেন হাজেরা ও সারাহর মৃত্যুর পর হজরত ইবরাহিম আ: আরব বংশোদ্ভূত কেনআনি স্ত্রী ইয়াক্কতিনের…
আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কথা পবিত্র কুরআন শরীফের চারটি স্থানে উল্লেখ হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি ছিলেন বনী ইসরাইলের একজন নবী। কেউ বলেছেন, তিনি ছিলেন মিশরীয়। তবে ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের মতকে অনেকে সঠিক বলেছেন। তাঁর মতে, হযরত আইয়ুবের বংশ পরিচয় হলো হযরত ইব্রাহীমের পুত্র ইসহাক, হযরত ইসহাকের পুত্র ঈশু, ঈশুর পুত্র আমুশ, আমুশের পুত্র আইয়ুব। হযরত আইয়ুব (আঃ) খ্রিষ্টপূর্ব নবম বা দশম শতকের লোক ছিলেন। হযরত আইয়ুব আল্লাহর নবীদের একজন। তার পিতার দিক থেকে তার বংশধর চার বা পাঁচজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে পৌঁছেছে। তার…